কালি জিরার মহৎ গুণ
- প্রজ্ঞানন্দ
আমাদের সকলের অতি পরিচিত রান্নার উপকরণ কালি জিরা। দেখতে কালো আর ছোট হলেও গুনে কিন্তু অতি বৃহৎ আর মহৎ। কালি জিরাকে আমদের দেশি মনে হলেও তা কিন্তু না, হাজার বছর আগেও মিসর সভ্যতায় এর ব্যবহার দেখা যায়। তারপর ধীরে ধীরে পার্সি সভ্যতায়, এমন কি গ্রীক সভ্যতায় ও কালি জিরার অবদান পাওয়া যায়। মহান গ্রীক চিকিৎসা বিজ্ঞানে কালি জিরাকে সর্ব রোগের মহা ওষুধ বলে ডাকা হতো।
আমাদের বাঙালি রান্না শিল্পে কালি জিরা ব্যবহারে খাবার যেমন সুস্বাদু হয় তেমনি জান্তে- অজান্তে এই কালি জিরা আমাদের জীবন রক্ষক হিসেবেও কাজ করে। ছোট বেলায় দেখেছি গর্ভবতী মহিলাদের আর সন্তান প্রসবকারী মায়েদেরকে কালি জিরা দিয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি করে খেতে দিতো যাতে মায়েরা তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠে এবং নবজাতকের জন্য প্রচুর পরিমাণে দুধের যোগান দিতে পারে। সর্দি কাশি সারতে নিঃসন্দেহে কালি জিরার সাহায্য নিতে পারেন।
কালি জিরার ৭ টি প্রমানিত চিকিৎসা ও উপকারিতা
১। ক্যান্সার
বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, কালি জিরা থেকে তৈরি তেলে এমন উপাদান আছে যা ক্যান্সার সেলের উপাদান ৫২% ধ্বংস করতে সক্ষম। যেহেতু কালি জিরাতে নানান প্রজাতের রাসায়নিক উপাদান আছে সে জন্য তা আমাদের ইমিউন সিস্টেমে গিয়ে আরও অনেক প্রতিকারক ও উপকারি রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে ও সক্রিয় করে। যেমন, এন্টি প্রলিফিরেশন, এপপ্তসিস ইন্ডাকশন, মেল সাইকেল এরেস্ট, রিএক্টিভ অক্সিজেন ইম্পেসিস জেনেরেসন, ইত্যাদি। কোলন, প্রস্টেট, লাঞ্জ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের টক্সিক (বিষাক্ত রস) ছড়ানো রোধ করতে সাহায্য করে এই কালি জিরা।
২। সুস্থ লিভার
যার সুস্থ লিভার নেই তার সুস্থ থাকার সম্ভাবনা কম। লিভার এমন একটি অঙ্গ যা আমাদের শরীরে ছাকুনির মতো কাজ করে। সমস্ত বিষাক্ত উপাদান থেকে আমাদের রক্ষা করে। অতিরিক্ত ওষুধ সেবন, মদ পান, দূষিত পানি পান, তৈলাক্ত খাবার ও ছোট খাটো রোগব্যাধির ফলে লিভার নষ্ট হতে পারে। কালি জিরার তেল ব্যবহারের ফলে লিভারের উপর ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে এবং লিভার জনিত রোগ নিরাময় হয়।
৩। ডায়াবেটিকস
গবেষণায় দেখা গেছে কালি জিরার উপাদান মানবদেহে কোষের রক্ত -মস্ত সিরাম ইন্সুলিন বাড়িয়ে দেয় আর সিরাম গ্লউকুজ কমিয়ে দেয়। যারা নিয়মিত ডায়াবেটিকস এর ওষুধ নিয়মিত সেবন করে তাদের অনেক পার্শ্ব- পতিক্রিয়া দেখা দেয় যেমন, পেত ফাঁপা, ডায়রিয়া, চর্ম রম, গ্যাস্ট্রিক, বুক জ্বালা, মাথা ব্যাথা, নখ পরা, মুখের বিস্বাদ, পেট আর মাংস পেশী ব্যাথা দেখা দেয়। রোগীরা যদি খাবারের সাথে নিয়মিত কালি জিরা খাওয়ার অভ্যাস করে তাদের মাঝে ভালো পরিবর্তন দেখা দেয়, সুস্থ থাকে।
৪। ওজন কমানো
প্রাকৃতিক ভাবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কালি জিরা অনেক উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। কালি জিরায় প্রাপ্ত রাসায়নিক উপাদান এন্টি ইনফ্লেমেটরি এজেন্ট আছে যা খাদ্য বা খাদ্যাভ্যাস জনিত কাজে সমতা আনে, যেমন, মুখরুচি, পাকস্থলিতে গ্লুকোজ শোষণ, লিভার পরিশোধন, রক্ত সমতা, কলেসট্রল ইত্যাদি।
৫। চুল
চুল পরা বন্ধ ও সুস্থ চুলের জন্য কালি জিরার ব্যবহার খুবই উপকারি। কালি জিরায় প্রাপ্ত এন্টি অক্সিডেন্ট আর এন্টি মাইক্রোবাইয়াল উপাদান এতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
৬। ত্বক
কালি জিরায় কোরাইড, ইপিডারমিস ও মেলানিন জাতীয় উপাদান আছে যা আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। নিয়মিত কালি জিরা সেবনে ও তেল ব্যবহারে এই উপকারিতা পাওয়া যায়।
৭। ইনফেকশন ( ক্ষত)
আমরা মাঝে মধ্যে শরীরে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ক্ষত হতে দেখি যা মরণঘাতী ও হতে পারে। এই মরণঘাতী জীবাণুকে সুপার বাগ বলা হয়। কালি জিরা থেকে প্রাপ্ত উপাদান এই সুপার বাগকে ধ্বংস করতে সক্ষম। কালি জিরার তেল দিয়ে শরীর ধোয়া মোছা করলে জীবাণু ধ্বংস হয়। যারা নিয়মিত কালি জিরা খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে তাদের সুপার বাগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেশি থাকে।
তাহলে, সুপার চিকিৎসক আপনার রান্না ঘড়েই আছে, অভ্যাস করুন, সুস্থ থাকুন।।
No comments:
Post a Comment